অনেকেই সুগার মানে ডায়াবেটিসকে ভাবেন। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল। সুগার বেড়ে যাওয়া মানেই কিন্তু ডায়াবেটিস না। যখন আমাদের শরীর সুগার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন ডায়েবেটিক্স হয়।
সুগার কোন রোগ না, কিন্তু ডায়াবেটিসকে একটি রোগ। তবে আমাদের শরীরের সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্ট। এছাড়াও আরো আলোচনা করব সুগার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত এবং সুগার হলে কি কি খাওয়া যাবেনা।
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমরা যখন কোন খাদ্য গ্রহণ করি তা আমাদের শরীর গ্লুকোজে পরিবর্তন করে। এই গ্লুকোজ আমাদের শরীরে শক্তির প্রধান উৎস। যখন গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়, আমাদের শরীর তখন এই গ্লুকোজ কে রক্তে প্রবাহিত করে। তখন রক্তের সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এভাবেই আমাদের শরীরে সুগার সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মূলত গ্লুকোজ রক্তে প্রবেশ করার আগে যদি আমাদের শরীর এটিকে খরচ করতে পারে তাহলে রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায় না। আমরা দুই ভাবে আমাদের শরীরে গ্লুকোজ বৃদ্ধি বা রক্তের সুগার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
১। এমন খাবার খেতে হবে যেগুলোতে সুগার বা গ্লুকোজ কম উৎপন্ন হবে।
২। কায়িক পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম করতে হবে।
আমাদের শরীরে যখন চিনি জাতীয় খাবার কম প্রবেশ করবে তখন গ্লুকোজ কম তৈরি হবে। কারণ এই ধরনের খাবার থেকে সবচেয়ে বেশি গ্লুকোজ তৈরি হয়।
আবার শরীরে যে গ্লুকোজ তৈরি হচ্ছে তা যদি আমরা পরিশ্রমের মাধ্যমে খরচ করে ফেলি তখন রক্তের সুগার এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে না।
সুগার কমানোর জন্য কি খাওয়া উচিত?
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে খাবার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে। এমন কিছু ঘরোয়া খাবার আছে যা খেলে রক্তে সুগার ঘরোয়াভাবে কমানো সম্ভব।
করলা
সুগার অথবা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা খুব ভালো কাজ করে। আমাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। করলা আমাদের শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেভাবে করলা খাবেন-
১। করলা দিয়ে রান্না তরকারি খেতে পারেন।
২। অথবা বীজ পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি খেতে পারে । প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার বীজ ভেজানো পানি খেতে হবে।
দারচিনি
দারচিনি সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব কার্যকরী। দারুচিনি ইনসুলিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সেই সাথে রক্তের সুপার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। খাওয়ার নিয়ম-
১। র্শনের গুড়া চা বা পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
২। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তরকারিতে এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে খেতে পারেন।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরায় ফাইটোস্ট্যারলস নামক উপাদান থাকে যা সুগার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। খাওয়ার নিয়ম-
১। হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন।
২। অথবা অ্যালোভেরার সরবত খেতে পারেন।
আম পাতা
বিভিন্ন গবেষকদের মতে, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি আম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি প্রতিদিন সকালে পান করলে সুগার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মেথি
আমরা কম বেশি সকলেই মেথির উপকারিতা জানি। চুল থেকে শুরু করে মাথার পা পর্যন্ত প্রতিটি অঙ্গের যত্নে মেথি ব্যবহার করা হয়। মেথিতে রয়েছে বিশেষ একটি গুণ যা আমাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেথি খাবারকে গ্লুকোজের পরিণত হতে বাধা সৃষ্টি করে। খাওয়ার নিয়ম-
১। রাতে ভিজিয়ে রাখা মেথি বীজের পানি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
২। মেথি পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে।
সুগার হলে কি কি খাওয়া যাবে না
কার্বোহাইটেড যুক্ত এমন কোন খাবার খাওয়া যাবে না। চাল, গম, আলু, বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এই ধরনের খাবার কম খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট মুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে আছে যেমন- সবজি, যে কোন ধরনের ফল, বাদাম ইত্যাদি।
আশা করি সবার সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো আপনাদের উপকারে আসবে। আমাদের সকলকে একটি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, যে রোগ আমাদের শরীরে প্রবেশ এর পূর্বেই তাকে প্রতিহত করতে হবে। রোগ যদি আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। তাই আমাদের সকলের উচিত যে কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
কিছু না খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় কেন?
উত্তরঃ শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি না করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।
ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?
উত্তরঃ ৫ অথবা ৬ পয়েন্ট।
সুগার রোগের লক্ষণ কি কি?
উত্তরঃ তীব্র তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ওজন হ্রাস , ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা ইত্যাদি।