আমাদের অনেকেরই সুগারের সমস্যা রয়েছে। সুগার হলে কি খেলে ভালো হবে তা আমাদের সকলের কম বেশি জানা উচিত। আপনার পরিবার অথবা আশেপাশে অনেক মানুষই আছে যাদের সুগারের সমস্যা রয়েছে। সাধারণত রক্তে সুগার লেভেল বৃদ্ধি পাওয়াকে সুগার সমস্যা বলা হয়। সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মানুষের রক্তে অনেক ধরনের সুগার রয়েছে। এর মধ্যে Glucose অন্যতম। আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এই সুগারের উপস্থিতি দেখা যায়। গ্লুকোজ আমাদের শরীরে শক্তি প্রবাহ নিশ্চিত করে। অর্থাৎ গ্লুকোজ থেকেই আমাদের শরীর শক্তির যোগান পায়।
আমরা যখন খাবার গ্রহণ করি সেই খাবারের একটা অংশ গ্লুকোজ গ্রুপে আমাদের রক্তে চলে আসে। তখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তখন একে ব্লাড সুগার বলা হয়। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণই হল ব্লাড সুগার লেভেল।
সুগার হলে কি খেলে ভালো হবে
চলুন এক নজরে দেখে নেই সুগার হলে কি খেলে ভালো হবে?
শাক-সবজি
নানা রকম ভিটামিন ও মিনারেলস এর উৎস। যা আমাদের শরীরের সুগার লেভেল কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। যেমনঃ পালং শাক, পুই শাক, লাউ শাক, ব্রকলি, ঢেঁড়স ও যে কোন ধরণের সবুজ শাক।
বিচি
শিমের বিচি, কুমড়োর বিচি, সুর্যমুখীর বিচি, চিয়া সিড ইত্যাদি সুগার লেভেল খুব ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
সামুদ্রিক মাছ
নানা রকমের মাছ, চিংড়ি, স্কুইড ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখুন।
ডাল
মুগ ডাল, ছোলার ডাল, মটর ডাল ও মসুর ডাল ইত্যাদি খেলে সুগার নিয়ন্ত্রণে আসে।
সব রকমের ফল
লেবু, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, আম, কাঁঠাল, বেরি জাতীয় ফল, সবুজ আপেল।
উপরে সুগার রোগীর খাদ্য তালিকা মেনে চললে খুব অল্প দিনের মধ্যে আপনার সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সুগার হলে কি খেলে ভালো হবে ? এমন প্রশ্নের উত্তরে সবাই জানতে চায় কি ওষুধ খেলে সুগার ভালো হয়ে যাবে। এখানে কয়েকটি ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো।
১। Metformin
২। Sulfonylureas
৩। Meglitinides
৪। Dipeptidyl peptidase-4 (DPP-4) inhibitors
৫। Different types of insulin
কোন গাছের পাতা খেলে সুগার কমে
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে সজনে পাতা অথবা মরিঙ্গা লিভ রক্তের সুপার নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই পাতাকে বিভিন্নভাবে আপনি খেতে পারেন। পাতা গুড়ো করে শুকানোর পরে অনেকদিন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া সবজি হিসেবে নিয়মিত খাদ্য তালিকা সজনে পাতা রাখতে পারেন।
প্রতি ১ গ্রাম সজনে পাতায়
● দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও
● দুধের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন,
● গাজরের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন এ
● কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম ।
রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সহ চোখের সমস্যা রক্তস্বল্পতা এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
সুগার হলে কি করতে হবে
রক্তে সুগার লেভেল বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিস দুইটা দুই জিনিস। ডায়াবেটিস হলো একটি রোগের নাম যা সুগার বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সুগার বৃদ্ধি মানেই সেটাকে ডায়াবেটিস বলা যাবে না। এর নির্দিষ্ট একটি মাত্র রয়েছে।
সুগার হলে আমাদের কি করতে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিশ্রম এবং খাদ্য অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিষেজ্ঞরা। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ফলমূল এবং ড্রাই ফুড জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা সংযুক্ত করতে বলেন।
কোন কোন খাবারে সুগার আছে
রক্তে সুগারের পরিমাণ বা ব্লাড সুগার আমাদের খাদ্যের কারণে হয়ে থাকে। আমরা যদি খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি তাহলে রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। যে যে খাবারগুলোতে সুগার রয়েছে তা হল-
● মাখন,
● ঘি,
● দুধ,
● চিনি
● অ্যালকোহল
● ফাস্ট ফুড,
● ভাজা খাবার,
● মিষ্টি খাবার ইত্যাদি
সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায়
সুগার হলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাস যা আপনার সবার কমাতে সাহায্য করবে।
কিছু বিশেষ খাবার সুগার কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। যেমন:
● করলা ভর্তা অথবা ভাজি
● আদা
● আমলকি
● অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ইত্যাদি।
পরিশেষে
অনেকের প্রশ্ন ছিল সুগার হলে কি খেলে ভালো হয়। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে আপনার এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে সুবিধা হয়েছে। সুগার কোন রোগ নয় তাই এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ সুগার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে ডায়াবেটিস হয়।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
কিছু না খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় কেন?
উত্তরঃ আপনার শরীর যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করে না।
তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোর খাবার?
উত্তরঃ এমন কোন নির্দিষ্ট খাবার নেই যা রক্তে শর্করার পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে কমিয়ে দেয়।
সুগার রোগের লক্ষণ কি কি?
উত্তরঃতীব্র তৃষ্ণা, অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা, দ্রুত ওজন হ্রাস, প্রচণ্ড ক্ষুধা, দুর্বলতা বা ক্লান্তি, অস্বাভাবিক বিরক্তি, ঝাপসা দৃষ্টি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি । অনেক সময় এই সব লক্ষণের কোনটাই চোখে পড়ে না।