নিম গাছ এমন একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ যার পাতার রস, গাছের বাকল, ডাল সবই কাজে লাগে। নিম পাতা রোগ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি শরীর গঠনে ও ভূমিকা রাখে। বর্তমানে বড় বড় প্রসাধনী প্রাণগুলো নিমপাতা দিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করছে। এবং এগুলো বেশ চড়া দামে বাজারে বিক্রি হয়।
নিম পাতার রস কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া নিম কাঠ ও অনেক শক্ত কাঠগুলোর মধ্যে অন্যতম। নিম পাতা স্বাস্থ্য গুণ এবং ঔষধি গুন বিবেচনা করে বিশ্ব সংস্থা এই গাছটিকে “২১ শতকের বৃক্ষ” হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
নিম পাতার অপকারিতা থেকে উপকারী দিকগুলো অনেক বেশি। তাই চলুন প্রথমে আমরা নিম পাতার উপকারিতা গুলো জেনে নিব:
ক্ষত নিরাময়ের সাহায্য করে
নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাক্রোবাইয়াল উপাদান। ক্ষতস্থানে নিম পাতা বেটে লাগিয়ে রাখলে দ্রুত ক্ষত নিরাময় হবে।
পেটে ব্যথা দূর করে
দীর্ঘদিন ধরে পেটে ব্যথার সমস্যা থাকলে ২ চা চামচ নিম পাতার রস ১০০ এম এল পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন। প্রতিদিন দুইবার করে এটি পান করলে অল্প দিনেই পেটের সমস্যা দূর হবে।
এলার্জির প্রকোপ কমায়
যাদের শরীরে এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে শরীরে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এই মিশ্রণটি পর পর কয়েকদিন শরীরে লাগালে এলার্জির সমস্যা চিরতরে বিদায় নেবে।
ব্রণ দূর করে
নিম পাতা বাটা মুখে লাগালে ব্রণ দূর হয়। এছাড়া নিম পাতার গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে খেলে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমে যায়।
ইনফেকশন দূর করে
নিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নিম্বিডল এবং জেডুনিন। ফলে ছত্রাক আক্রান্ত স্থানে নিম পাতার তেল লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। নিম পাতার পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগালেও ইনফেকশন দূর হয়।
বাতের ব্যথা দূর করে
যেসব জায়গায় বাতের ব্যথা হয় সেই জায়গাগুলোতে নিম পাতা তেল মাসাজ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই বাতের ব্যথা পালিয়ে যাবে।
মশা কমাতে কার্যকরী
নিম পাতার গ্যাডোনিন উপাদান মশা দূর করতে সাহায্য করে। নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি ঘরে স্প্রে করলে মশা পালিয়ে যায়।
ভাইরাস রোগ দূর করে
ভাইরাস বিভিন্ন রোগ যেমন: চিকেন পক্স, হাম এবং চর্মরোগ করতে নিম পাতা সেদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করুন। এই পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের এলার্জি জনিত জ্বালাপোড়া দূর হবে।
ঠান্ডা জনিত সমস্যা কমায়
ঠান্ডার কারণে বুকে কফ জমলে ২ চা চামচ নিমপাতার রস অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। প্রতিদিন অন্তত তিনবার করে খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। গর্ভবতীরা এটি খেতে পারবেন না।
জন্ডিস নিরাময় করে
প্রতিদিন ২ চা চামচ নিম পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে জন্ডিস এক সপ্তাহের মধ্যেই নিরাময় হয়।
রক্ত পরিষ্কার হয়
প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস সেবন করলে রক্ত পরিষ্কার হয় ,হৃদপিণ্ড ভালো থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
প্রতিদিন সকালে নিমপাতার ফুলের জুস খেতে পারলে মেটাবলিজম বৃদ্ধি পাবে এবং চর্বি ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
খুশকি দূর করে
নিমপাতা ফুটানো পানি ঠান্ডা করে শ্যাম্পু করার পর চুলে ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা এবং খুশকি পুরোপুরি দূর হয়।
নিম পাতার অপকারিতা
● গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে নিম পাতা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়,
● যেসব দম্পতি সন্তান চাচ্ছেন তারা নিম পাতা ব্যবহার করবেন না,
● কিডনি এবং লিভারের রোগীরা নিম পাতা ব্যবহার করবেন না,
● শিশুদের নিম পাতার রস না খাওয়ানোই ভালো,
● নিম পাতা প্রতিদিন সেবন করলে অহেতুক ক্লান্তি আসতে পারে,
● সব ধরনের অপারেশনের ১৫ দিন আগে নিমপাতা ব্যবহার বন্ধ করুন,
● লো প্রেসারের রোগীরা নিম পাতা এড়িয়ে চলুন।
আশা করি নিম পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিতভাবে বুঝতে পেরেছেন।
নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি
এলার্জির ক্ষেত্রে নিম পাতা সেবন করার পদ্ধতি হলো:
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই চিমটি নিম পাতার গুঁড়ো এর সঙ্গে এক চা চামচ ভুসি ভেজানো পানি পান করুন। পান করার আগে ভালো করে চামচ দিয়ে নেড়ে নিতে হবে। দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগেও এটি পান করলে এলার্জি থেকে এক মাসের মধ্যে রেহাই পাবেন।
উপসংহার
আমাদের আজকের আর্টিকেল টি সাজানো হয়েছিল নিম পাতার উপকারিতা নিয়ে। যারা নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করতে চাচ্ছেন আশা করি আর্টিকেলটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
নিম পাতা খেলে কি চুলকানি ভালো হয়?
উঃ নিম পাতা খেলে চুলকানি এবং ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর হয়।
নিম গরম নাকি শীতল?
উঃ নিম পাতা শরীরের জন্য শীতল উপাদান বহন করে।
নিম কিভাবে খেতে হয়?
উঃ নিম পাতা গুঁড়ো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন, অথবা নিম ট্যাবলেট পানির সঙ্গে মুখে গিলে সেবন করতে পারেন।
নিমের উপকারিতা কি?
উঃ চর্মরোগ দূর করে, পেটের সমস্যা দূর করে, খুশকি দূর করে, ওজন কমায়, বিভিন্ন ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।