মধুকে বলা হয় অমৃত। প্রায় ৫০টিরও বেশি খাদ্য উপাদান রয়েছে মধুতে। বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর হওয়ায় প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ, যা আমাদের শরীরের তাপ ও শক্তি যোগান দেয় এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
এছাড়াও ক্লান্তি দূর করতে অনেক ভাল ভূমিকা পালন করে। আরও অনেক বিশেষ গুণ রয়েছে যেমন - রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠন, শ্বাসকষ্ট নিরাময়, যৌ*ন সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রায় সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । আপনাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় মধুকে রাখতে পারেন।
মধুতে থাকা খাদ্যগুণ
● ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজঃ আমাদের শরীরের শক্তির উৎস হল গ্লুকোজ। শরীর চালাতে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয় গ্লুকোজ।
● ৩৪-৪৩% ফ্রুক্টোজঃ রক্তচাপ কমাতে, কোলেস্টেরল ঠিক রাখতে, শরীরের ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
● সুক্রোজঃ আমাদের শরীরে পুষ্টির যোগান দেয়।
● মন্টোজঃ হাড় এবং দাঁত শক্ত রাখে।
● অ্যামাইনো অ্যাসিড
● খনিজ লবণ
● এনকাইম
● ক্যালরি।
● ভিটামিন বি১
● ভিটামিন বি২
● ভিটামিন বি৩
● ভিটামিন বি৫
● ভিটামিন বি৬
● আয়োডিন
● জিংক
● কপার
● অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল
● অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল
এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ রকমের খাদ্যগুণ থাকে প্রাকৃতিক মধুতে।
মধুতে বিদ্যমান রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর ফলে নিয়মিত খাঁটি মধু পানে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
মধু আমাদের শরীরে তৎক্ষনাৎ শক্তি যোগায়, শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শরীরে তাপ উৎপন্ন করে।
মানব দেহে মধু খাওয়ার উপকারিতা
১। মানব দেহের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে পেটে গ্যাস, বদ হজম হয় না।
২। আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা রক্তশূন্যতা দূর করে। যারা রক্তশূন্যতা ভুগছেন তাদের জন্য নিয়মিত মধু খাওয়া খুব জরুরি।
৩। আমাদের শরীরের রক্ত নালী প্রসারিত করে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে ফলে হার্ট এটাক এর ঝুকি থাকে না।
৪। আমাদের শরীরের খনিজ উপাদান এর চাহিদা পূরণ করে। মধুতে আছে কপার, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি।
৫। অনেক সময় আমাদের মুখের মদ্যে ঘা হয়। এই রোগের জন্য মধু খুব উপকারি একটা ওষুধ। ৩ থেকে ৪ দিন ব্যাবহারের ফলে মুখের ঘা ঠিক হয়ে যায়।
৬। সর্দি, জ্বর হলে তুলসি পাতার সাথে রস করে খেলে খুব দ্রুত সর্দি, জ্বর সেরে যায়। এছাড়াও নিয়মিত মধু খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৭। ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৮। মধু শিশুদের দেহের হাড়ের গঠন শক্ত করে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ।
৯। রাতের বেলায় দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের হজম শক্তি বাড়ে, এছাড়াও আরও অনেক উপকার রয়েছে।
১০। বাতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
১১। মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বক সুন্দর রাখে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।
১২। ব্রণের জন্য খুব ভালো কাজ করে। বিভিন্ন তথ্য মতে, রাতে ব্রণের উপর মধু লাগিয়ে রাখলে সকালে ব্রণ ঠিক হয়ে যায়।
খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে মধু খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুব ভালো। খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হল।
১। হজম ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ফলে হজমে সমস্যা হয় না।
২। খালি পেটে মধু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৩। পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
৪। শরীরের ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করে।
৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ছেলেদের মধু খাওয়ার উপকারিতা
ছেলেদের জন্য মধু অনেক উপকারী একটা খাবার। শারীরিক গঠনসহ আরও অনেক উপকার করে মধু।
১। যৌন সমস্যা সমাধানে খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত মধু খেলে এই ধরণের সমস্যা দূর হয়। সকালে ও রাতে মধু খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
৪। সর্দি-জ্বর উপশম করে।
৫। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে।
৬। ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন নিরাময় করে।
৭। শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৮। রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
৯। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি।
আমাদের শরীরের জন্য মধু খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমাদের সবার উচিত খাদ্য তালিকায় মধু রাখা। বর্তমান বাজারে ভেজাল মধু অনেক তাই এই বিষয়ে সচেতন থাকবেন সবাই। আশা করি, এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।
বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নাবলী
কেন মধু নষ্ট হয় না?
উত্তরঃ সাধারণত মধু নষ্ট হয় না, কিন্তু অনেক রাখলে মধু নষ্ট হয়।
প্রতিদিন কি পরিমান মধু খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ ২ থেকে ৩ চামচ মধু খাওয়া উচিত।
গাঢ় মধু কি ক্ষতিকর?
উত্তরঃ না, ক্ষতিকর না।