হাই ব্লাড প্রেসার এর মত লো ব্লাড প্রেসার মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সাধারণত যাদের স্বাস্থ্য তুলনামূলক দুর্বল তারা লো ব্লাড প্রেসার এ ভুগে থাকেন। এই নিম্ন রক্তচাপ এর আরেকটি নাম হল হাইপোটেনশন। হঠাৎ করে প্রেসার লো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কিছু খাবারের মাধ্যমে প্রেসার বাড়ানো সম্ভব। চলুন জেনে নেই প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে?
সাধারণত টক জাতীয় ফল, সব ধরনের মাংস, ডাবের পানি, স্যালাইন, আঙ্গুরের রস, লবণ মিশ্রিত খাবার ইত্যাদি খেলে লো প্রেসার থেকে সাথে সাথে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চলুন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
লো ব্লাড প্রেশার কী
মানবদেহের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। এই স্বাভাবিক রক্তচাপ যখন হঠাৎ করে কমে গিয়ে ৯০/৬০ মিলিমিটার মার্কারির এর নিচে চলে আসে তখন তাকে লো ব্লাড প্রেসার বলে। এবং এর অন্য নাম হলো নিম্ন রক্তচাপ।
প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয়
প্রেসার লো হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। চলুন এক নজরে দেখে নেই প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয়?
● দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে,
● বুক ধরফর করে,
● ক্লান্তি অনুভূত হয়,
● প্রচুর পরিমাণে মাথা ঘোরায়,
● প্রেসার অতিরিক্ত লো হলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে,
● শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়,
● মস্তিষ্ক, কিডনি কম কাজ করে,
● তৃষ্ণা অনুভূত হয়,
● প্রস্রাব কমে যায়,
● হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়,
● ভারসাম্যহীনতা অনুভূত হয়।
লো প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় কি
লো পেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় কি তা অনেকেই জানতে চান। চলুন এক নজরে উপায় গুলো দেখে নেওয়া যাক:
লিকার চা পান করুন
যাদের লো প্রেসার জনিত সমস্যা রয়েছে প্রতিদিন গ্রিন টি, লিকার চা এবং কফি খেতে পারেন। এতে করে কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তচাপ বেড়ে যাবে।
লেবুর শরবত খান
লো ব্লাড প্রেসার জনিত সমস্যায় লবণ, চিনি এবং লেবু মিশ্রিত করে এক গ্লাস শরবত তৈরি করুন। এই শরবতটি খেলে ব্লাড প্রেসার আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।
বাটার মিল্ক খেতে পারেন
দুই চামচ পাতলা দই, সামান্য নুন এবং ভাজা জিরের মিশিয়ে বাটার মিল্ক তৈরি করুন। এটি ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে।
গরম মসলা ব্লাড প্রেসার বাড়ায়
যাদের লো প্রেসার এর সমস্যা রয়েছে তারা তাদের প্রতিদিনের খাবারে গরম মসলা ব্যবহার করুন। অথবা গরম মসলার গুঁড়ো চা এর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারে। এটি ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করবে।
তুলসী পাতা চিবিয়ে খান
তুলসী পাতায় বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ৭-৮ তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।
কিসমিস খান
কিসমিস ভেজানো পানি এবং কিসমিস দুটোই ব্লাড প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে কিসমিস ভেজানো পানি এবং কিসমিস খেলে লো ব্লাড প্রেসার থেকে মুক্তি পাবেন।
বাদাম দুধ পান করুন
সাত থেকে আটটি প্রথম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিন। এই বাদানগুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাবে
স্যালাইন পান করুন
হঠাৎ করে ব্লাড প্রেসার লো হয়ে গেলে স্যালাইন খেলে সাথে সাথে আরাম পাওয়া সম্ভব। ২৫০ গ্রাম পানির সঙ্গে মিশিয়ে সাথে সাথে খেয়ে নিন।
ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার খান
ভিটামিন বি সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, চিজ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখলে ব্লাড প্রেসার উন্নত হয়।
ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার খান
ফোলেট সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যেমন শাকসবজি, ডাল, ডিম এবং বিট খাবার তালিকায় রাখলে লো ব্লাড প্রেসার এর হাত থেকে আস্তে আস্তে রেহাই পাবেন।
হঠাৎ প্রেসার লো হলে করণীয়
হঠাৎ লো প্রেসার হলে করণীয় উপায় গুলো হলো:
● চা, কফি পান করুন,
● কিছুটা লবণ খেতে পারেন,
● টক জাতীয় খাবার খান,
● বেশি করে পানি পান করুন,
● বিট এর জুস পান করুন,
● কার্বোহাইড্রেট কম খান,
● তুলসী পাতা চিবিয়ে খান,
● সময় নিয়ে খাবার খান।
লো প্রেসারের ঔষধের নাম
লো ব্লাড প্রেসারে লপ্রেসর ৫০ এম জি ট্যাবলেট টি খাওয়া যেতে পারে। তবে এই গোত্রের আরো কিছু ঔষধের নাম হলো প্রজোসিন, টর্বিন্যাফিনে,ব্যুপ্রোপিওন। তবে মনে রাখবেন লো প্রেসার হলে প্রথমে ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে কমানোর চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে কাজ না হলে পরবর্তীতে ওষধ সেবন করে দেখতে পারেন। ঔষধটি খাবার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
উপসংহার
দুর্বল শরীর নিয়ে অনেকেই লো প্রেসারে ভুগে থাকেন। এ ধরনের রোগীরা সর্বদা জানতে চান প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে? তাদের জন্যই সাজানো হয়েছিল আমাদের আজকের আর্টিকেল। আশা করি লো প্রেসারের রোগীরা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
মানুষের শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপ কত?
উঃ মানুষের শরীরে স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকা একান্ত প্রয়োজন। মানুষের শরীরে স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মিমিপারদ।
রক্তচাপ তিন প্রকার কি কি?
উঃ মানুষের শরীরে তিন ধরনের রক্তচাপের নাম হলো SBP, DBP এবং MAPR।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ গুলো কি কি?
উঃ বুক ধরফর করা, মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব।