ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। এই সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য একমাত্র “ভিটামিন সি” কার্যকর ভূমিকা রেখে থাকে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বলতে অনেকেই শুধু লেবু জাতীয় খাবার কে বুঝে থাকেন। কিন্তু ভিটামিন সি পাওয়া যায় এমন প্রচুর খাবার রয়েছে। তাই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য এবং শরীর সতেজ রাখার জন্য অবশ্যই জানতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গুলো কি কি?
বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং ফলমূল থেকে মূলত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ঘা শুকাতে সর্দি, কাশি, জ্বরের প্রকোপ কমাতে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার অধিক মাত্রায় কার্যকরী। চলুন তাহলে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি কি
বিভিন্ন ধরনের টাটকা ফলমূল এবং সবজি থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। চলুন দেখে নেই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি কি?
টমেটোর জুস
হয়তো অনেকেই জানেন না এক কাপ টমেটো জুস থেকে ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। টমেটোর জুসে বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যারা ভিটামিন সি এর অভাবে ভুগছেন তারা প্রতিদিন টমেটো জুস পান করুন।
ব্রকলি
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভিটামিন সি এর সবথেকে ভালো উৎস হলো ব্রকলি। কেউ যদি প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ ব্রকলি করে খেতে পারেন তাহলে সে ৮১.২ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারবেন। এটিতে বিদ্যমান ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করে।
পাকা
পেঁপে
বাঙালির রান্না ঘরে পেঁপে থাকে না এমন হয় না। ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হলো পাকা পেঁপে। পাকা পেঁপে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে কাঁচা পেঁপে উপযোগী নয়।
পাকা
আম
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন জাতের পাকা আম কিনতে পাওয়া যায়। এই পাকা আম ভিটামিন সি এর ভালো একটি উৎস। এক কাপ পাকা আম থেকে ৬০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি অনায়াসেই পেয়ে যাবেন।
পেয়ারা
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই “ভিটামিন সি এর ভান্ডার” হিসেবে খ্যাত পেয়ারা পাওয়া যায়। মাঝারি সাইজের এক কাপ পেয়ারা খেলে ৩৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেয়ে যাবেন। এটি আপনার ইমিউনিটি বাড়াতে কাজ করবে।
আলু
অনেকেই হয়তো জানেন না আলু থেকে ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। একটি আলু থেকে ৭২. ৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি ক্ষত সারায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
শাক
সব ধরনের সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই খাবার তালিকায় শাক রাখলে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি আইরনের ঘাটতি পূরণ হয়।
কাঁচা
মরিচ
একটি কাঁচা মরিচের প্রায় ৬৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আমাদের দৈনিক যে পরিমাণ ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয় তার প্রায় ৭২% পূরণ করতে পারে একটি কাঁচা লঙ্কা। এর ক্যাপসাইসিন উপাদান ব্যথা কমাতে এবং ক্ষত সারাতে ব্যবহৃত হয়।
ক্যাপসিকাম
মাঝারি সাইজের এক কাপ ক্যাপসিকাম থেকে প্রায় ১৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। আমাদের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয় তার প্রায় ১৫২% পূরণ করতে পারে ক্যাপসিকাম।
জোয়ান
জোয়ানের পাতায় প্রায় ৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার এর মধ্যে এটি অন্যতম।
সরষে
শাক
এক বাটি রান্না করা সরষে শাক থেকে আপনি পাবেন ১১৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়াও এর অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলো হল: পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেট।
লেবু
আমরা কমবেশি সবাই জানি লেবু হল ভিটামিন সি এর সবথেকে ভালো উৎস। একটি কাঁচা লেবু থেকে ৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
আমলকি
আমলকি থেকে যে ভিটামিন পাওয়া যায় তা আমাদের হেয়ার টনিক হিসেবে কাজ করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
স্ট্রবেরি
এক কাপ স্ট্রবেরি থেকে প্রায় ৫৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। স্ট্রবেরি সুস্বাদু ফল হওয়ায় এটি খেতে সবাই পছন্দ করেন।
উপসংহার
ভিটামিন সি
জাতীয় খাবার
এর সব থেকে ভালো উৎসসমূহ নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। যারা ভিটামিন
সি জনিত সমস্যায় ভুগছেন অথবা ডিটামিন সি এর ভালো উৎস কি তা জানেন না তাদের কাছে আজকের
আর্টিকেলটি গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করছি।
সর্বাধিক
জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ভিটামিন সি কি কি খাবারে থাকে?
উঃ বাঁধাকপি, মুলা শাক, কাঁচালঙ্কায়।
ভিটামিন সি এর অপর নাম কী?
উঃ অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid)
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি খাওয়া উচিত?
উঃ একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে প্রতিদিন ৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি যথেষ্ট।