কিডনির ব্যথা কোথায় হয় ও কেমন হয়

কোমরের পেছনদিকে ব্যথা হলেই অনেকে কিডনির ব্যথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। অথবা কোমর ব্যথা হলেই অনেকে কিডনির ব্যথা হলে শংকিত হয়ে যান। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোমর ব্যাথা হয় একটি নির্দিষ্ট অংশ জুড়ে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, সন্ধি এবং স্নায়ু সম্পর্কিত জায়গা জুড়ে হয়ে থাকে।


কিডনির ব্যথা কোথায় হয় ও কেমন হয়


হঠাৎ করে ওঠাবসা, সামনের দিকে ঝোঁকা অথবা জোরে হাঁটলে, দীর্ঘক্ষণ ধরে একই কাজ করলে এই ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে কিডনির ব্যথা পেটের নিচে পিছনের দিকে তীব্র অথবা আকস্মিকভাবে শুরু হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে মৃদু আবার কারো ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। চলুন তাহলে কিডনির ব্যথা কোথায় হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই:

    কিডনির ব্যথা বোঝার উপায়

    কিডনির ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসহনীয় হয়ে থাকে। প্রথমদিকে এই ব্যথায় খুব গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীতে তীব্র আকার ধারণ করে। চলুন দেখে নেই কিডনির ব্যথা বোঝার উপায় গুলো কি কি?


    প্রথমত এই ব্যথা কোমরের নিচের দিকে অনুভূত হয়। অনেক সময় পিঠের নিচের অংশে ও এই ব্যথা মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে। অনেক সময় তলপেটের ব্যথা ও কিডনি ব্যথার লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়। কিডনিতে স্টোন হলে অথবা কিডনিতে মারাত্মক ধরনের ইনফেকশন হলে এই ব্যথা তীব্রতর আকার ধারণ করে।


    তবে কিডনি ইনফেকশনে ব্যথার পাশাপাশি আরো কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেগুলো হলো:


     শরীরে অতিরিক্ত পানি আসা,

     বমি বমি ভাব,

     তীব্র বা মৃদু জ্বর,

     প্রসাবের সাথে দুর্গন্ধ আসে অথবা রক্ত আসে,

     প্রসাবের পরিমাণে পরিবর্তন ঘটে,

     খাবারে অরুচি এবং শরীরের দুর্বলতা,

     অতিরিক্ত পরিমাণে ওজন হ্রাস পায়,

     মূত্রাশয় বা অংশের সমস্যা দেখা দেয়,

     হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে থাকে,

     সোজা হয়ে দাঁড়াতে অথবা জোরে হাটতে অসুবিধা হয় ইত্যাদি ‌


    পেটের পিছন দিকে অথবা পিঠের নিচের অংশে ব্যথার পাশাপাশি যদি উপরে উক্ত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।


    কিডনির সমস্যা দূর করার উপায়

    মানুষের শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর মধ্যে কিডনি অন্যতম। যারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তারা কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে দেখতে পারেন। তবে এগুলো কোনোভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। চলুন দেখে আসি কিডনি সমস্যা দূর করার উপায় গুলো কি কি?


    ব্যথার ঔষধ কম খান

    আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিন এই ঔষধ গুলো বেশিদিন খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই ওষুধগুলো খাওয়ার প্রয়োজন হলেই শুধু গ্রহণ করুন।


    মাদকদ্রব্য পরিহার করুন

    মাদকদ্রব্য কিডনি এবং ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই কিডনি রোগীরা দ্রব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।


    নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

    নিয়মিত শরীরচর্চা করলে যেমন শরীর সুস্থ থাকে ঠিক তেমন কিডনিও সুস্থ থাকে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন

    অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি বিকল করতে সাহায্য করে। তাই যাদের ডায়াবেটিস বেশি তারা বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করিয়ে নিন।


    মৌসুমী ফলমূল এবং শাকসবজি খান

    মৌসুমী ফলমূল এবং শাকসবজি সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। দৈনন্দিন খাবার থেকে লাল মাংস বাদ দিন। এর পরিবর্তে খাবার তালিকায় বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজি রাখুন।


    উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুণ

    ডায়াবেটিকস এর মত উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি বিকল করতে সাহায্য করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।


    কিডনি ব্যথার কারণ

    যখন পেটের পিছনের অংশে অথবা পিঠের নিচের দিকে পেশি বা লিগামেন্ট টিস্যুতে চাপ পড়ে তখন সাধারণত কিডনি ব্যথা অনুভূত হয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস নিলে, খুব জোরে হাটা চলার সময়, অতিরিক্ত ওজন হাতে তুললে, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে একই কাজ করতে থাকলে সাধারণত কিডনি ব্যথা বেশি হয় ‌

    কিডনিতে যখন স্টোন হয়, কিডনিতে ইনফেকশন হলে, কিডনি ফুলে গেলে এই ধরনের ব্যাথা প্রকাশিত হয়। তবে এই ব্যথার পাশাপাশি আরও কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। যা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। জানার জন্য আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

    উপসংহার

    কিডনি ব্যথায় কখনো ঘরোয়া টোটকা বা ঘরোয়া সমাধান উপযোগী হতে পারেনা। এটি একটি কঠিন অসুখ যা মরণের দিকে মানুষকে ঠেলে দেয়। এবং এর চিকিৎসাও হয় দীর্ঘমেয়াদী। আপনাদের সুবিধার্থে আমাদের আজকের আর্টিকেল সাজানো হয়েছিল কিডনির ব্যথা কোথায় হয় এই সম্পর্কে। আশা করি, আপনারা বিস্তারিতভাবে তা জানতে পেরেছেন।

     

    বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলি

    কিডনির স্বাভাবিক পয়েন্ট কত?

    উঃ নারীদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা থাকা উচিত ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম। এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এইমাত্রা থাকা উচিত ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম।

    কিডনি রোগে কি বেশিদিন বাঁচা যায়?

    উঃ কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে প্রতিস্থাপিত করে ৩০ থেকে ৪০ বছর সাছন্দে বাঁচা সম্ভব।

    কিডনি কোথায় অবস্থিত?

    উঃ সাধারণত মেরুদন্ডের দুই পাশে পাঁজরের খাঁচার নিচে কিডনি অবস্থিত থাকে।

    Tags

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0 মন্তব্যসমূহ
    * Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.